রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন

পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছে না শরীয়তপুরবাসী

পদ্মা সেতুর সুফল পাচ্ছে না শরীয়তপুরবাসী

স্বদেশ ডেস্ক:

শরীয়তপুর জেলা শহর থেকে পদ্মা সেতুর সংযাগ সড়ক পর্যন্ত ঢাকা-শরীয়তপুর সড়কটি অপ্রশস্ত ও ভাঙাচোরা হওয়ায় পদ্মা সেতুর প্রকৃত সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শরীয়তপুরের মানুষ। সেতু উদ্বোধনের পর এই সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ায় প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হয়ে ৪০ মিনিটের পথ পেরোতে সময় লাগছে এখন দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। আবার কখনো কখনো আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লেগে যায় জেলা শহর থেকে জাজিরা প্রান্তের টোল প্লাজা এলাকায় পৌঁছাতে। এ ছাড়াও এ সড়কের কোটাপাড়া নামক স্থানে কীর্তিনাশা নদীর উপর ১২ ফুট প্রশস্তের ঝুঁকিপূর্ণ পুরনো সেতুটি এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে পদ্মা দিয়ে যাতায়াতকারী ভারী যানবাহনের শ্রমিক ও যাত্রীদের। অথচ পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অনেক আগে থেকেই এই সেতুটি জরাজীর্ণ, বিপজ্জনক। ক্ষতিগ্রস্ত সরু সেতু উল্লেখ করে হালকা যান চলাচলের জন্য খোলা রেখে ভারী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সড়কের পাশে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ কর্তৃপক্ষ। আর কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এই অপ্রশস্ত সেতু ও সড়ক দিয়েই জীবনের ঝুঁকি ও অবর্ণনীয় ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করছে লাখ লাখ যাত্রী ও হাজার হাজার যানবাহন।

এ রুটে চলাচলকারী বাসমালিক, শ্রমিক ও যাত্রীদের সাথে কথা বলে এসব অভিযোগ ও তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা জানা গেছে। তবে জেলা বাসমালিক সমিতি ও স্থানীয়রা দাবি করেছেন একটি নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েই দায় এড়াতে পারে না শরীয়তপুর সওজ। এ দিকে সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জানিয়েছেন, আগামী শুষ্ক মৌসুমে ঝুঁকিপূর্ণ এই সেতুর পাশে একটি বেইলি সেতু করার প্রক্রিয়া চলামান রয়েছে।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ, বাসমালিক সমিতি, যাত্রী ও গাড়ি শ্রমিকদের সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে শরীয়তপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলের যানবাহন চলাচল শুরু হলেও সেতুর সুফল ভোগের অন্যতম দাবিদার শরীয়তপুরের লাখ লাখ যাত্রীর ভোগান্তি কমেনি। কারণ পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের সংযোগ থেকে শরীয়তপুর জেলা শহর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার রাস্তার কাজিরহাট বন্দর পর্যন্ত সড়কটি ১২ ফুট প্রশস্ত। এরপর জেলা শহর পর্যন্ত ১৮ ফুট প্রশস্ত। তাও বেশির ভাগ স্থানই ভাঙাচোরা। একটি বাস সাইড দিতে গেলে অপর দিকের গাড়িগুলো আটকে যায়। ফলে এ সড়কের কীর্তিনাশা নদীর সেতুর দুই প্রান্ত, কাজিরহাট বন্দর বাজারের মোড়, জাজিরা টিঅ্যান্ডটির মোড়সহ চার থেকে পাঁচ স্থানে প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয় চালক ও যাত্রীদের। আর এতে শরীয়তপুর থেকে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত মাত্র ৪০ মিনিটের রাস্তা পেরুতে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা সময় বেশি লেগে যায়।

জাজিরা প্রান্তের নাওডোবা থেকে শরীয়তপুর জেলা শহর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য ২০২০ সালের মার্চ মাসে এক হাজার ৬৮২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। সড়কটি নির্মাণের জন্য শরীয়তপুর জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা ও সওজ বিভাগ ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শুরু করে। এরপর পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ থেকে জাজিরার নাওডোবার তিন কিলোমিটার এলাকা ভূমি অধিগ্রহণ করে সড়ক বিভাগকে বুঝিয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। কিন্তু সড়ক বিভাগ ওই অংশের কাজ এখনো শুরু করতে পারেনি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই সড়কের ভূমি অধিগ্রহণের কাজ চলমান রয়েছে। এ দিকে গত মে মাসের শেষের দিকে জেলা শহরের শরীয়তপুর ফায়ার সার্ভিসের সামনের সেতু থেকে জাজিরা টিঅ্যান্ডটি মোড় পর্যন্ত প্রায় ১৪ কিলোমিটার দুই লেনের সড়ক নির্মাণকাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এই ১৪ কিলোমিটার কাজের জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনেক আগেই কার্যাদেশ পেলেও কাজটি শুরুই করে কাজের মেয়াদকাল শেষ হওয়ার মাত্র এক মাস আগে। তাও চলছে ধীরগতিতে। দুই মাসে প্রেমতলা পর্যন্ত মাত্র দেড় কিলোমিটার সড়কের মেকাডম বিছানো পর্যন্ত কাজ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।

শরীয়তপুর থেকে ঢাকাগামী যাত্রী ইশতিয়াক হোসেন, মজিবুর রহমান ও মাসুম খানসহ অনেকে বলেন, অন্তত পাঁচটি স্থানে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়ে আমাদের ঢাকায় পৌঁছতে দেড় ঘণ্টার পরিবর্তে তিন থেকে চার ঘণ্টা সময় লেগে যায়। অথচ পদ্মা সেতুর সাথে অন্যান্য জেলার সংযোগ সড়কের কাজ সেতু উদ্বোধনের অনেক আগেই শেষ হয়েছে; কিন্তু আমাদের জেলার মানুষ একটি সড়কের জন্য পদ্মা সেতু সংলগ্ন জেলা হয়েও সুফল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

ঝুঁকিপূর্ণ সেতুতে যানজটে আটকে পড়া শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস পরিবহনের চালক হেলাল চৌধুরী জানান, বাস নিয়ে যখন সেতুতে উঠি তখন সেতু দু’দিকে দুলতে থাকে। যেকোনো সময় সেতুটি ভেঙে পড়তে পারে এমন আশঙ্কায় সেতুটি পারাপারের সময় অন্তর কাঁপতে থাকে।

শরীয়তপুর বাসমালিক সমিতির সভাপতি ফারুক আহাম্মদ তালুকদার বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ার সাথে সাথে মানুষের উৎসাহ-উদ্দীপনা বেড়ে চলছে। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী এখন শতাধিক বাস শরীয়তপুর-ঢাকা রুটে চলছে। অনেকসময় বিআরটিসির দোতলা বাসও আসে। সড়ক ও জনপথ বিভাগ বিকল্প কোনো ব্যবস্থা না করে কোটাপাড়া সেতুটি যান চলাচলের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ঝুঁকিপূর্ণ সেতুতে বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে নোটিশ দিয়েই তার দায় এড়াতে পারবে না সড়ক বিভাগ। এ ছাড়াও এ সড়কে যানজট কমাতে আমরা শরীয়তপুর থেকে নাওডোবা পর্যন্ত সড়কের পাশে পকেট তৈরি করে দেয়ার জন্য সড়ক বিভাগে একটি আবেদন করেছি। আপাতত কয়েকটি পকেট তৈরি করে দেয়া হলেও অনেকটা যানজট মুক্তভাবে মানুষ ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে।

শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ভূঁইয়া রেদওয়ানুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কের নাওডোবা থেকে শরীয়তপুর জেলা শহর পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ করা সম্পন্ন না হওয়ায় সড়ক উন্নয়নকাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ২০২১ সালে সড়কটির শরীয়তপুর থেকে জাজিরা কলেজ পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার কাজের টেন্ডার হয়েছে। বর্তমানে টু লেনের কাজ চলছে। বাকি অংশের কাজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। কোটাপাড়া কীর্তিনাশা নদীর সেতুটি অনেক পুরনো। সেতুটি যান চলাচলের উপযোগী নয়, তাই সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ৫৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সেতুটি নির্মাণকাজ শুরু করা হয়েছে। যথাসময়ে অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় সেতু নির্মাণ সময়সীমার মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে না। সময় বর্ধিত করে সেতু নির্মাণ করতে আরো দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগতে পারে। ইতোমধ্যে বিভাগীয় অফিস থেকে পর্যবেক্ষণ টিম এসেছিল। তাদের পরামর্শে সেতুতে ভারী যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করেছি। আগামী শুকনো মৌসুমে বিকল্প বেইলি সেতুর ব্যবস্থা করা হবে। এই সেতু যানজট মুক্ত রাখতে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তা প্রয়োজন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877